প্রকাশিত: Thu, Jan 18, 2024 12:24 AM
আপডেট: Fri, Jun 27, 2025 1:45 AM

[১]দুর্নীতিতে ১ নম্বরে, আরও ১৭ কারণে দেশের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত: সিপিডি

বিশ্বজিৎ দত্ত: [২] প্রায় ৬৮ শতাংশ ব্যবসায়ী উচ্চ দুর্নীতির এ সমস্যাকে  ব্যবসার এক নম্বর শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে আছে অদক্ষ আমলাতন্ত্র। প্রায় ৫৫ শতাংশ ব্যবসায়ী এটি মনে করেন। আর ব্যবসা-বাণিজ্যে তৃতীয় বড় সমস্যা হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতার বিষয়টিকে মনে করেন ৪৬ শতাংশ ব্যবসায়ী। 

[৩] বুধবার বাংলাদেশ ব্যবসায় পরিবেশ ২০২৩এর উদ্যোক্তা জরিপের ফলাফলে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ( সিপিডি)। 

[৪] সংবাদ সম্মেলনে  সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড.খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তাঁর কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তাঁর পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। বড় ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনোভাবে ঘুষ-দুর্নীতি সামলে নিতে পারলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছে এটি বড় সমস্যা।

[৫] শীর্ষ তিনটি ছাড়া অন্য ১৭টি  সমস্যা হলো, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, জটিল কর নীতি, বারবার নীতি পরিবর্তন, দক্ষ শ্রমশক্তির অভাব, উদ্ভাবনের সক্ষমতায় ঘাটতি, শ্রমশক্তিতে দুর্বল নৈতিকতা, উচ্চ করহার, জলবায়ু পরিবর্তন, সরকারের অস্থিতিশীলতা, অপরাধ ও চুরি, বিধিনিষেধমূলক শ্রম আইন ও দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে ১৭টি সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্যও প্রযোজ্য। কোনো দেশে এসব সমস্যার মাত্রা ভিন্ন।

[৬] সিপিডির  গবেষণা পরিচালক বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে পুরোনো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এবার নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ সামনে এসেছে। যেমন বৈদেশিক মুদ্রার সংকট। এসব কারণে ব্যবসায় পরিবেশ আরও জটিল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কিছু ব্যবসায়ীর সক্ষমতা বেড়েছে। কিন্তু এ সংখ্যা খুবই কম। ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যাগুলোর সমাধান না হলে বৈষম্য বাড়বে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে যাবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা পিছিয়ে পড়বে।

[৭] ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক শীর্ষ পর্যায়ে সদিচ্ছার প্রতিফলন আছে। নির্বাচনী ইশতেহারেও অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন দরকার।

[৮] প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তলানিতে আছে। ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায়ও বেশ পিছিয়ে আছে দেশটি।

[৯] ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতি করতে সিপিডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিবেশের উন্নতিতে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ১০০ দিন, ১ বছর, ৩ বছর ও ৫ বছরের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; ন্যায়পাল কার্যালয় স্থাপন; সীমিত সময়ের জন্য খাতভিত্তিক কিছু কমিশন গঠন, যেমন ব্যাংক, শেয়ারবাজার, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংস্কার; একটি সমন্বিত আর্থিক লেনদেন খাত প্রতিষ্ঠা; সরকারি কেনাকাটা ব্যবস্থা আধুনিক করা ইত্যাদি। এখনও দেশে ব্যবসায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা দুর্নীতি। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে অস্থিতিশীলতা, অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের ব্যবসার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে বিগত সময়ের চেয়ে অবকাঠামো, ঋণসহায়তা প্রাপ্তি এবং অস্থায়ী নীতি সহায়তায় বিষয়ে সামান্য কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সম্পাদনা: ইকবাল খান